Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
চলন বিল
স্থান

গুরুদাসপুর উপজেলাতে চলন বিলের সিংহভাগ অবস্থিত।

কিভাবে যাওয়া যায়

নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পথে চলন বিলে প্রবেশ করা যায়।

যোগাযোগ

0

বিস্তারিত

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলা জুড়ে এর বিস্তৃতি। রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলা, আটিটি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে এর বিস্তৃতি। এছাড়া রয়েছে ছোট বড় অনেক জলাশয়। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল। শুকনা মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে। তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। ১৯১৯ সালে ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়ার হিসেব মতে, চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার। অপরদিকে ১৯৬৮ সালের জরিপ মোতাবেক চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ কিলোমিটার।বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ র্গকিলেমিটারে। সংকুচিত হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। বর্ষা মৌসুমে বিলে পলি পড়া (২২২.৫ মিলিয়ন ঘনফুট), অপরিকল্পিত বসতবাড়ি স্থাপন, জাতীয় প্রয়োজনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটারের মহাসড়ক নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।বিলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুননগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর প্রশস্ততম দিকটি উত্তর-পূর্ব কোনাকুনি। নাটোরের সিংড়া থেকে গুমনী পাড়ের কচিকাটা পর্যন্ত এ বিলের সবচেয়ে বড় অংশ, যা প্রায় চব্বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ। নাটোরের সিংড়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে পাবনার তাড়াশ উপজেলার ভদাই নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত বিলের পূর্ব সীমানা।
আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এক বিলের সৃষ্টি হয়।চলনবিলের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে নাটোরে। নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের বুকেই। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে চলনবিলের অংশ বিশেষ। চলনবিলের বেশ কয়েকটি বিল পড়েছে এ দুই উপজেলায়। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল মোড় থেকে বনপাড়া সড়কে প্রবেশ করলে কিছু দূর যাওয়ার পর চলনবিলের যে অংশের দেখা মিলবে সেটাও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মধ্যে। এখান থেকে দক্ষিণ দিকের পুরো অংশটাই এই জেলার অন্তর্গত চলনবিল। পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চলনবিলের অংশ। গাজনা, বড়, সোনাপাতিলা, ঘুঘুদহ, চিরল, গুরকা ইত্যাদি বড় আকারের বিলগুলো বেশিরভাগই পাবনা জেলায়। বড়বিলের আয়তন প্রায় ৩১ বর্গ কিলোমিটার ও সোনাপাতিলা বিলের আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গকিলোমিটার। এছাড়া এ বিলের আরও দুটি বৃহৎ অংশ যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুরলিয়া ও দিক্ষি বিল চাটমোহরে অবস্থিত। বর্ষায় এ বিল থাকে জলে পরিপূর্ণ। পাবনা জেলা সদর থেকে বাসে চাটমোহর এসে সেখান থেকে রিকশায় আসা যায় চলনবিলে। এখানকার মানুষগুলো অনেক সহজ সরল। এরা সকালবেলা ঘুম থেকে কেহ হাল চাষ করতে বের হয় কেহ বা আবার ফসল দেখতে। আমি বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি গাজনার বিলেন পাশে। ছোট সময় গাজনার বিলে ফটবল খেলতে যেতাম, বৃষ্টিভেজা কাদা ভরা পিছলা মাঠে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা, খেলা শেষে বিলের পানিতে গোসল আহ!!!!!!!!!!
এ অঞ্চলের মানুষের অভিমত, চলনবিল হচ্ছে তাদের শস্যখনি, বাস্তবেও তাই। এখানকার মাটি উর্বর। বিল শুকিয়ে গেলে উর্বর মাটিতে কৃষকরা ধানের চারা রোপণ করেই উল্লাসে ফেটে পড়েন। তারা জানেন স্বল্প ব্যয়ে তাদের গোলা ভরে যাবে। শুধু তাই নয়, বর্ষার শেষ নাগাদ চলে এখানে মাছ ধরার মহোৎসব। সেই হিসেবে চলনবিল মৎস্যখনিও বটে। এখানে পাওয়া যায় দেশি পুঁটি, গজার, বোয়াল, শৈল, টাকি, টেংরা, পাতাসী, খলসা, বাইন, কাঁকলা, চিতল, চেলা, আইকর, শিংসহ নানান ধরণের দেশি মাছ। এই বিপুল মাছের ভাণ্ডারে আছে প্রচুর কাঁকড়া।

চলনবিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা মিলবে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। সাঁতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। নৌকায় ভ্রমণকালে হৈচৈ, লাফালাফি করবেন না।
এই সুযোগে দেখে নিতে পারেন চলনবিল জাদুঘরটিও। গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে এ জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এ সংগ্রশালা। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এই জাদুঘরে।